Header Ads

মানুষের জ্ঞান লাভের এবং ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার সহজ উপায়

মানুষের জ্ঞান লাভের এবং ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার সহজ উপায়

মানুষের জ্ঞান লাভের উপায়:
মানুষ জীবনযাত্রার অপরিহার্য জ্ঞান আহরণের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনটি উপায় প্রাপ্ত হয়। যার প্রথমিক সূত্র হচ্ছে- আল হাওয়াসসুল খামসাহ বা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আহরিত জ্ঞান। দ্বিতীয় সূত্র হচ্ছে- আল-আক্বল তথা মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা ও গবেষণা। আর তৃতীয় ও মূল সূত্র হচ্ছে-
আল-ওহ্‌ইয়্যু তথা আল্লাহ তাআলা নাজিলকৃত ওহির জ্ঞান।

প্রথম সূত্র : পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের জ্ঞান
চক্ষু, কর্ণ, জিহবা, ত্বক ও নাষিকা। এ পাঁচটি ইন্দ্রিয় দ্বারা মানুষ ধরা, ছোঁয়া, শ্রবণ করাসহ নিকটস্থ বিষয়গুলো অনুভব করে থাকে।
যেমন- কারো সামনে কোনো লোক থাকলে, সে লোকটির আকার-আকৃতি, গঠন, রং ও রূপ জানার জন্য পঞ্চ ইন্দ্রিয়ই যথেষ্ট।

দ্বিতয় সূত্র : বিবেকের জ্ঞান
মানুষ বিবেক দ্বারা চিন্তা-চেতনা, গবেষণা, বিচার-বিবেচনা করে থাকে। অর্থাৎ পঞ্চ ইন্দ্রিয় যেখানে অপারগ সেখানে মানুষ বিবেক দ্বারা জ্ঞান আহরণ করে থাকে।
যেমন- মানুষের গঠন-প্রকৃতি পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জানার পর সে মানুষটির একজন সৃষ্টিকারী রয়েছে। কারণ সৃষ্টিকর্তা ব্যতিত কোনো সৃষ্টিরই অস্তিত্ব হতে পারে না। এ জাতীয় তথ্য মানুষ ইন্দ্রিয় শক্তিদ্বারা অর্জন করতে পারে না। এ জ্ঞান অর্জনের জন্য দরকার আক্বল বা বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা, গবেষণার জ্ঞান।

তৃতীয় সূত্র : ওহির জ্ঞান
পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও বিবেক বুদ্ধির জ্ঞান যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু হয় ওহির জ্ঞান। কেননা পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও আক্বলের জ্ঞান নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলে আবদ্ধ।
যেমন- ইন্দ্রিয় জ্ঞানে মানুষের গঠন সম্পর্কে জেনে আক্বল দ্বারা তার সৃষ্টির বিষয় অনুভব করার যায়। স্রষ্টা মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন? মানুষের কাছ থেকে সৃষ্টিকারী কি কাজ আশা করেন এবং  কি কি বিষয় অপছন্দ করে। এ সব প্রশ্নের সঠিক জবাব ইন্দ্রিয় ও আক্বেল দ্বারা জানা অসম্ভব। মানুষ তার জীবনকে সফল ও সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য সমুদয় বিষয়গুলো জানা এবং সে মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার জন্যই ওহির একান্ত আবশ্যক।
সুতরাং কোনো সন্দেহ নেই যে, ওহি হলো জ্ঞান অর্জনের সেই উচ্চতম মাধ্যম যা মানুষের সব অনিবার্য প্রয়োজন পূরণের দিক-নির্দেশনা দেয়। কারণ, ইন্দ্রিয় ও বিবেক সর্বদা নির্ভুল ও সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে অক্ষম। যা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে আল্লাহর অফুরন্ত নিআমাত ওহির জ্ঞান।

ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার সহজ উপায়:

(১) অন্যের মুখে হাসি ফোটাও:
কাউকে যখন সাহায্য কর তখন কেমন লাগে? খুব তৃপ্ত মনে হয়না? তাছাড়া তোমার ভেতরে কি একটা আনন্দের ইতিবাচক শক্তির বিস্ফোরণ ঘটছে – এরকম মনে হয় কি? মনে হয় যে ভেতরটা প্রসারিত হয়ে উঠল – ছড়িয়ে গেল? এর কারণ যখন তুমি কারো মুখে হাসি আনো তখন তার কাছ থেকে ইতিবাচক স্পন্দন আর আশীর্বাদ, শুভকামনার তরঙ্গ তোমার কাছে ভেসে আসে।
সেবা তোমার ভেতরে কিছু ভালো গুণ সঞ্চিত করে। এই গুণ তোমাকে তোমার ধ্যানের গভীরে যেতে সাহায্য করে।
শিল্পী মদনের ভাষায় – “আমি যখন সেবা করি তখন সরাসরি  উপকার পাই। আমার মন তৃপ্তিতে সুখে আর শান্তিতে ভরে ওঠে। এই  তৃপ্তি আর শান্তি আমাকে ধ্যানের গভীরে নিয়ে যায়।”

(২) নীরবতার ধ্বনি শোনার অভ্যাস কর:
মনে কর তুমি ভোর বেলা ছাদে উঠে সূর্যোদয়ের সময় রক্তিম আকাশকে দেখছো আর তার সৌন্দর্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে পড়েছ। তখন কি তোমার ভেতরে এক গভীর নীরবতা আর ওই সৌন্দর্যের সঙ্গে একাত্মতার অনুভব হয় না? সৌন্দর্য তোমাকে ভাষাহীন করে দেয়। মন একেবারে স্থির শান্ত হয়ে যায়। এর কারণ কি সেটা কি কখনও ভেবে দেখেছো?
মৌন থাকলে অনেক কম ভাবনা মনে আসে আর মন স্থির হয়।
বেশিরভাগ সময় যখন আমরা কথা বলি আমাদের মনও কথা বলে। আমাদের ইন্দ্রিয় তথ্য সংগ্রহ করে আর বিভিন্ন ভাবনায় মনকে ভরিয়ে তোলে। মনে অজস্র চিহ্ন এঁকে দেয়।

নীরবতা ধ্যানের পরিপূরক। মৌন থাকলে তুমি সহজে ধ্যানের গভীরে যেতে পারবে। মৌনতা ও ধ্যান একসঙ্গে পাওয়ার সহজ উপায় হল আর্ট অফ লিভিং –এর পার্ট টু প্রোগ্রাম। এই পার্ট টু প্রোগাম বেঙ্গালুরু আশ্রমে প্রত্যেক সপ্তাহের শেষে নেওয়া হয়।
হিতাংসী সচদেবের ভাষায় –“মাঝে মাঝে আমি অসংখ্য ভাবনার জালে  আবদ্ধ হয়ে পড়ি। মৌন থাকলে ধীরে ধীরে সেই ভাবনা চলে যায় আর  আমি ধ্যানের গভীরে যেতে পারি।”

(৩) শরীরকে যোগব্যায়ামের দ্বারা স্বাস্থ্যবান করে তোল:
লক্ষ্য করে দেখেছ কি কোন কোন দিন তোমার ধ্যান করতে বসে অস্থির লাগে। ধ্যানের গভীরে যেতে পারনা।
এর কারণ হল তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা তোমার শরীরের মাংসপেশীকে অনমনীয় করে তুলেছে, তাই তুমি অস্থির হয়ে আছ। কিছু যোগাসন করলে এই অনমনীয় শরীর নমনীয় হয়ে উঠবে। তোমার মন স্থির হয়ে তোমাকে ধ্যানের গভীরে যেতে সাহায্য করবে।

(৪) খাবারের বিষয়ে যত্নবান হও:
তুমি আগে আমিষ খাবার খেয়ে, তৈলাক্ত, ভাজা খাবার খেয়ে ধ্যান করতে, আর এখন হাল্কা সাত্ত্বিক খাদ্য গ্রহণ করে ধ্যানে বস – এই দুই ধ্যানের মধ্যে কোনো পার্থক্য কি বুঝতে পার? এর কারণ মনের ওপর খাদ্যের সরাসরি প্রভাব আছে।
যে ধ্যান করে তার পক্ষে আদর্শ খাদ্য হল শস্য, সবুজ তাজা শব্‌জি, তাজা ফল, স্যালাড, স্যুপ ইত্যাদি। সহজপাচ্য হাল্কা খাবার প্রাণশক্তিকে উচ্চস্তরে উন্নীত করে।

(৫) নিজেকে নিজে গান শেখাও:
তোমার মনের উপর বিভিন্ন গান বিভিন্ন আবেগ সঞ্চার করে।
আমদের শরীরের ৯০ শতাংশ কিম্বা তারও বেশি অংশ খালি জায়গা দিয়ে তৈরি। তাই শব্দের বিশেষ প্রভাব আছে আমাদের উপর৷ সৎসঙ্গে গান করলে আমাদের আবেগ শুদ্ধ হয় আর আমরা আমাদের ভেতরে একটা প্রসারণ লক্ষ্য করি। ক্ষুদ্র মনের সর্বদা কথা বলার অভ্যাস সৎসঙ্গে এসে শান্ত হয় আর আমাদের মনও স্থির হয়ে ধ্যানের গভীরে যেতে সাহায্য করে।

(৬) ধ্যানের নির্ধারিত সময়:
ধ্যানের গভীরে যাওয়ার আর একটি সূত্র হল ধ্যানের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রাখা ও সেই সময় রক্ষার বিষয়ে শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে ওঠা।
দিব্যা সচদেব বলেন – “আগে আমি বিভিন্ন সময়ে ধ্যান করতাম। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে আমি দুপুরে খাদ্যগ্রহণের আগে ধ্যান  করছি। দেখছি এই একই সময়ে রোজ ধ্যান করলে ধ্যান খুব ভালো হচ্ছে আর খুব গভীর হচ্ছে।”

বিস্তারিত দেখতে https://bit.ly/2MA8Sx1

No comments

Powered by Blogger.